সহজ কথা বলতে আমায় বলো যে, সহজ কথা যায় না বলা সহজে

রবিঠাকুর ঠিক ই বলেছেন। সহজ কাজটা করা সবচেয়ে জটিল। সহজ কথাটা বলা সবচেয়ে কঠিন। ঠিক এভাবেই সহজ ও সরল একটা লাইফ লিড করা সবচেয়ে শক্ত।

আজকের অস্থিরতার পৃথিবীতে, যেখানে ডিপ্রেশন বাসা বেঁধেছে অগণিত মানুষের ভিতরে; সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে মিনিমালিজমের চর্চা। প্রাচীন এই জীবনদর্শনের আছে এক জাদুকরী ক্ষমতা। যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় মানুষের বিক্ষিপ্ত চিন্তা। জীবনকে গড়ে তোলা যায় স্বচ্ছ পানির মত নির্মল।

গৌতম বুদ্ধ হোক কিংবা অন্য যে কোন মহান সাধক: সকলেই করেছেন মিনিমালিজমের চর্চা। চেষ্টা করেছেন চিন্তাভাবনা কে উঁচুতে রেখে জীবনকে কতটা সহজভাবে পার করা যায়। আর এই সরল জীবনযাপনের চেষ্টার প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে জীবনের প্রতিটি পরতে। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক এমনকি আপনার বাসস্থানেও।

মিনিমালিজম কি

সহজ ভাষায় মিনিমালিজম হচ্ছে আপনার জীবনের অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি আরও ফোকাসড হওয়া। এই ধরুন আপনার সেলফোনে ৩০-৪০টা অ্যাপ আপনি নামিয়ে রেখেছেন। আদতে এগুলোর বেশিরভাগই আপনার ব্যবহার করা হয় না। আপনি অহেতুক মরীচিকার পিছনে দৌড়চ্ছেন। কারণ পুঁজিবাদী সিস্টেম আপনাকে লোভ দেখাচ্ছে, আপনি ভাবছেন আপনার লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানোর জন্য এগুলো দরকার। কিন্তু সম্ভাবনা প্রবল যে এগুলোর কিছুই আপনার কাজে আসছে না বরং কেড়ে নিচ্ছে আপনার সময়। ফলাফল: আপনি পাচ্ছেন পারস্পরিক সামঞ্জস্যহীন ইঁদুর দৌড়ের মাঠে নিজেকে ছেড়ে দেয়ার বিষাদময় অনুভূতি।

এতো গেল দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তিগত দিকের কথা। জীবনের যে দিকেই তাকাবেন, সে দিকেই দেখবেন এটাই সত্য। এই ধরুন আসবাবে ঠাসা কোন ঘরে প্রয়োজনীয় আসবাবগুলোর যত্ন নেয়া যেমন সম্ভব হয়না, তেমনি থাকে না কোন ওপেন স্পেস। আর বাসস্থানে স্পেসের স্বল্পতা আপনার মনে ফেলে গভীর প্রভাব। মন হয়ে ওঠে বিক্ষিপ্ত; অস্থির।

মিনিমালিস্টরা কেমন হয়

অনেকেই মনে করেন মিনিমালিস্টরা বোধহয় কৃপণ প্রকৃতির মানুষ। সত্যিকার অর্থে বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন। মিনিমালিস্টরা ভীষণ উদার প্রকৃতির মানুষ। একটা ফোন তার জন্য যখন যথেষ্ট মনে হয়, তখন তিনি গিফট পাওয়া ফোনটা অবলীলায় এমন কাউকে দিয়ে দেন যার হয়ত একটা ফোন খুবই প্রয়োজন।

মিনিমালিস্টরা ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ডিশওয়াশার এর মত এক্সপেন্সিভ জিনিসগুলোকেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মনে করেন কারণ এগুলো তাঁর সময় বাচায়। কিন্তু, টিভিকে এরা কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করেন না। যতটুকু ভালো কোয়ালিটি হলে গাড়ি চলে, ধারকর্য ছাড়া সেরকম একটি গাড়ি লোণ নিয়ে কেনা লেটেস্ট মডেলের গাড়ির চেয়ে তাদের বেশি পছন্দ।

এরা যে কোন কিছু কেনার আগে তাঁরা নিজেকে প্রশ্ন করেন,

সত্যিই কি এটা আমার প্রয়োজন?

চারটা পোশাক যদি তাদের জন্য যথেষ্ট হয়, তাহলে পঞ্চমটিকে তার বোঝা মনে করেন। ঠিক এজন্যই তারা অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন; অতিরিক্ত জিনিসপত্র বিলিয়ে দেন মন খুলে।

মিনিমালিস্ট হওয়ার দরকারটা কি

আপনি যখন অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আর মোটেও চিন্তিত নন, তখন একাগ্রতাকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন দরকারি বিষয়গুলোতে । সীমিত কিন্তু ফোকাসড হবে আপনার চিন্তা, পারফেক্ট হবে আপনার কাজ, জীবনের আনন্দ অনুভব করবেন আরও তীব্র ভাবে।

আর মানসিকভাবেও একজন মিনিমালিস্ট থাকে অনেক বেশি স্বাধীন ও পরিতৃপ্ত। ভোগবাদ, বাস্তববাদ আর শো-অফের ঊর্ধ্বে গড়ে ওঠা পারপাসফুল এই জীবনদর্শন ফিরে দিতে পারে একজন মানুষের আত্মিক প্রশান্তি, সমৃদ্ধ সমাজ এবং সুন্দর এক পৃথিবী।

মিনিমালিস্ট ঘর

কথায় আছে,

“আপনি আসলে আপনার সাথের ৫ জনের একটা এভারেজ”

মানে আপনি কেমন হবেন সেটা নির্ভর করে আপনি কোন ৫ জনের সাথে সবচেয়ে বেশি মিশছেন, সেটার ওপর। এর কারণ এই ৫ জনের সাথে সবচেয়ে বেশি সময় আপনি কাটাচ্ছেন। ঠিক তেমনি সবচেয়ে বেশি সময় আপনি কাটান আপনার বাসায়। অনেকে কাটান অফিসে। সেই জায়গাটা কেমন সেটার একটা বড় ইমপ্যাক্ট স্বাভাবিকভাবেই থাকে আপনার মনের ওপর।

একটা পছন্দসই মিনিমাল ঘর তৈরি কিন্তু অনেক সময়ই অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ!

যদি আপনার ঘরটা হয় একদম সিম্পল কিন্তু ডায়নামিক; কেমন হয়? ঘরে থাকবে না দরকারের বেশি আসবাব বরং যে আসবাবগুলো থাকবে সেগুলো হবে খুবই ফাংশনাল। আপনার রেগুলার লাইফ সহজ করবে আপনার আসবাবগুলো। আসবাবগুলো হতে পারে দামি কিন্তু আপনার মন মত। থাকবে প্রচুর হাঁটাচলার জায়গা, থাকবে উদাস হবার ফুরসত, থাকবে চিন্তায় ডুব দেবার জায়গা।

জিনিসপত্রে ঠাঁসা একটা রুমে সারাটা দিন কাটালে মনের ক্যানভাসে জায়গা পাবেন কই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *