বাড়ি শব্দটা ছোট, ব্যাপকতা বিশাল
সেটা একটা কুঁড়ে ঘর হোক, কিংবা হোক বুর্জ খলিফা। মানুষের সাথে বাড়ির সম্পর্ক সেই গুহা যুগ থেকে। নিজের গুহা কে নিজের বাড়ি মেনে নিয়ে সেখানে করা চিত্রকর্ম শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ই কি? সেটা কি নিজের জায়গায় নিজের খেয়াল খুশি মত সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠা নয়? সেটা কি নিজের অধিকার একান্ত নিজের কিছুর ওপর ফলানো নয়?
তাহলে মানুষ তো বাড়ি বানায়, বানাচ্ছে, বানাবে। কিন্তু কেন? এই আধুনিক যুগে এসে কেন একজন মানুষ বাড়ি বানাবে। আপনি তো ভাড়া ও থাকতে পারেন। কিংবা হয় ইতোমধ্যেই আপনার বাড়ি আছে। তাহলে কেন বাড়ি বানাবেন?
বাড়ি কিনবেন না বানাবেন?
প্রথম কথা হচ্ছে বাড়ি কেনা আর বাড়ি বানানো দুটো আলাদা জিনিস। তার আগে বুঝতে হবে যে আমার এখন একটা বাড়ি দরকার। কিন্তু কখন বুঝবো আমার বাড়ি বানানোর বা কেনার সময় হয়েছে।
বাংলাদেশ খুব মজার একটা ট্রেন্ড খেয়াল করবেন। সেটা হচ্ছে সবাই নতুন বাড়ি কিনতে চায় কিংবা বাড়ি বানাতে চায়; কিন্তু পুরনো বাড়িগুলো রেনোভেট করেও যে নতুন বাড়ি তৈরি করা যায়, নিজের মতো সাজিয়ে নেওয়া যায়; সেই মার্কেট এখানে এখনো তৈরি হয়নি। অথচ বাইরের দেশগুলোতে হরহামেশা পুরনো বাড়ি রেনোভেট করা হচ্ছে। ফলাফল: বাজছে খরচ টিকে থাকছে ঐতিহ্য। সে যাই হোক, কেন আপনি বাড়ি বানাবেন? চলুন শুরুতে চিন্তা করি মানুষ বাড়ি কেন বানায়?
বাড়ি ভাড়া আর কত?
ধরা যাক আপনি প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেন। মানে বছরে দেন ৬ লক্ষ টাকা। মানে দশ বছরে দেন ৬০ লক্ষ টাকা। কিন্তু দশ বছর পরেও সেই বাড়িটা কিন্তু আপনার হচ্ছে না, আপনি ভাড়া বাড়িতেই থাকছেন। তাহলে যদি ১০ বছরের বাড়িভাড়া একবারে ইনভেস্ট করে দেখা যাক? ফলাফল: বাড়ির পিছনে যদি এই পুরো টাকাটা ঢালা যায়, তাহলে হিসেবে ১০ বছরের ভাড়ায় আপনার নিজের একটা বাড়ি হচ্ছে।
বাড়ি মানে বিনিয়োগ!
আবার বাড়ি বানানোর একটা বড় কারণ হতে পারে ইনভেস্টমেন্ট। অনেকে বাড়ি বানানো শুরু করে কিন্তু শেষ হবার আগেই বাড়িটা বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। অনেকে বাড়ি বানানোর শেষ হবার পরে সেটা সেল করে দেয়। ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে সেটা একেবারেই মন্দ নয়। কিন্তু এখানে খুব মজার একটা ব্যাপার আছে। আমাদের বেশিরভাগেরই ধারণা যে একটা ফ্ল্যাট বানানোর পর সেটার দাম সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। ধারণা কিন্তু একদমই ভুল। ফ্ল্যাট আসলে মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা অন্য যে কোন জিনিসের মতই। যখনই আপনি মোড়ক খুলে ফেলবেন অর্থাৎ সেখানে কিছুদিন থাকবেন, এরপর সেটার দাম আর কখনোই বাড়ে না, সেটার দাম বরং সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে যে ফ্ল্যাটটা আমি তিন বছর আগে এক কোটি টাকায় কিনেছি, সেটার দাম এখন কিভাবে তিন কোটি টাকা হয়ে গেল? মজার বিষয় হচ্ছে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ে নি। আমরা যদি সহজ ভাষায় বলি তাহলে ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি আসলে একটা লায়বিলিটি আর জমি হচ্ছে এসেট। দাম যে বেড়েছে সেটা আসলে ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার কারণে বাড়েনি। সেটা বেড়েছে মূলত ফ্ল্যাটের নিচে যে জমিটা আছে, সেটা বাড়ার কারণে।
বাড়ি হতে পারে শেকড়ে ফেরার মাধ্যম!
অনেকে আবার বাড়ি বানায় আইডেন্টিটি নিশ্চিত করার জন্য। কেউ একজন হয়তো অনেক আগে গ্রাম থেকে শহরে চলে এসেছেন। সময়ের সাথে তার সন্তান হয়েছে, পরিবার হয়েছে বড়। এখন সেই পরিবারের সদস্যরা বড় হবার পর তাদের বাড়িতে মানে গ্রামের বাড়িতে নিজের একটা বাড়ি তৈরি করতে চায়। চায় নিজের পরিচয়কে স্টাবলিশ করতে। এ জন্য ও অনেকে বাড়ি বানায়।

আবার অনেক প্রবাসীর মনে একটা সুপ্ত বাসনা থাকে যে নিজের এলাকায়, নিজের গ্রামে, নিজের একটা সুন্দর ছোট্ট বাড়ি হবে। প্রবাসে প্রচুর পরিশ্রম করছেন, টাকা জমাচ্ছেন একটাই স্বপ্ন: ভিটে তে একটা সুন্দর বাড়ি করতে চাই। হয়তো নিজে থাকবেন না, নিজের বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্যদের থাকার জন্য সুদূর প্রবাস থেকে নিজের গ্রামে একটা সুন্দর বাড়ি বানানোর স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখছেন অনেক প্রবাসী।
বাড়ি কেন বানাবেন, সে তো জানা গেল। তাহলে পরের গল্প হবে কখন বানাবেন সেটা নিয়ে। ততদিন স্বপ্ন থাকুক, থাকুক বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি সব চাওয়া পাওয়া!