ঘরবাড়ি তো তৈরি হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু যুগ যুগ ধরেই কি আর্কিটেক্টরা ছিল? ব্যাচেলর অফ আর্কিটেকচার কিংবা আর্কিটেকচার এর বিভিন্ন ডিগ্রী তো সে দিনের আবিষ্কার, বেশি হলে কয়েকশো বছর হবে। প্রশ্ন হচ্ছে,

  • এর আগে তাহলে ঘরবাড়ি কারা ডিজাইন করতো?
  • কিংবা বিভিন্ন স্থাপনা কারা ডিজাইন করতো?
  • তাদের তো ডিগ্রী ছিল না, তাহলে কি তারা আর্কিটেক্ট?
  • তার মানে কি ডিগ্রী না থাকলেও আর্কিটেক্ট হওয়া যাবে?
  • আর ডিগ্রি থাকলেই কি সে আর্কিটেক্ট?

তাহলে আর্কিটেক্ট হতে গেলে কি কি লাগে? কিভাবে হতে হয় আর্কিটেক্ট?

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় প্রচুর কালজয়ী আর্কিটেক্ট আছেন, যাদের আর্কিটেকচারে কোন ডিগ্রী নাই। এদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী নিয়ে তারপর আর্কিটেক্ট হয়েছেন। বিশেষ করে প্রাচীন যুগে কিংবা মধ্যযুগে অনেকেই আছেন, যাদের রিলেভেন্ট সাবজেক্টে আলাদা করে কোন ডিগ্রী ছিল না কিন্তু তাদেরকে আমরা আর্কিটেকচারের দিকপাল হিসেবে বিবেচনা করি।

সুতরাং আর্কিটেক্ট হতে মূলত যেটা দরকার সেটা হচ্ছে প্রিন্সিপাল। সাথে দরকার নলেজ। প্রিন্সিপাল জিনিসটা কি সেটা ডাক্তারদের উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। একজন ডাক্তার যেমন জানেন যে তিনি চাইলেই এই রোগীকে পরবর্তীতে আবার আসতে বলতে পারেন, তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে পারেন, কিন্তু সেটা তার প্রিন্সিপালের বিরোধী; এজন্য তিনি সেটা করেন না। তেমনি যে কোন স্থাপনা ডিজাইন করার সময় কিছু নির্দিষ্ট প্রিন্সিপাল মেনে কাজ করতে হয়। যে ডিজাইনটা তিনি করছেন সেটা কি তিনি বসবাসকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে করছেন? এটা কি তাদের কোন উপকার হচ্ছে? তারা অহেতুক কোন সমস্যায় পড়বে না তো? এসব দায়িত্ব কিন্তু একজন আর্কিটেক্টকে নিতে হয়।

আর সাথে দরকার নলেজ অর্থাৎ জ্ঞান। একটা স্থাপনার ম্যাটেরিয়াল কেমন হবে, কেন কোন ম্যাটেরিয়াল ইউজ করব, কেন এই করিডোরটা এভাবে ডিজাইন করা হবে, কেন এই ঘরে গ্লাস ইউজ করা হবে, কতটুকু ইউজ করা হবে, এসব কিছু আসলে জ্ঞানের মাধ্যমেই আসে।

আবার ধরা যাক একটা স্কুল ডিজাইন করা হবে। লাইট কতটুকু হওয়া উচিত, একটা ব্ল্যাকবোর্ড কিংবা হোয়াইট বোর্ডের কোন দিক দিয়ে আলো আসলে সেখান থেকে দেখতে সুবিধা হবে; একটা হাসপাতালের করিডোর কেমন হওয়া উচিত, যখন একজন ইমার্জেন্সি পেশেন্টকে নিয়ে দৌড়ে যাওয়া হবে তখন অপর পাশ দিয়ে আরেকজন ইমারজেন্সি পেশেন্টকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে যথেষ্ট জায়গা থাকছে কিনা, এসব কিছু মাথায় রেখেই ডিজাইনের কাজটা করতে হয়। আর এজন্য দরকার একটাই জিনিস সেটা হচ্ছে নলেজ।

নলেজটা আসে আসলে পড়াশোনা থেকে আর আপনি যে পড়াশোনা করে আর্কিটেক্ট হয়েছেন সেটার প্রমাণ হচ্ছে ব্যাচেলর ডিগ্রি কিংবা আরও উচ্চতর কোন ডিগ্রী।

তাহলে এবার আসা যাক ডিগ্রিটা কিভাবে পাওয়া যাবে। মূলত আর্কিটেকচারের পড়াশোনায় ৫ বছরে একটা ব্যাচেলর ডিগ্রি দেয়া হয়। ডিগ্রির পরে আবার একটা লাইসেন্সিং এক্সামও দিতে হয়। এরপর আপনি প্রফেশনালি আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। একাডেমিক পড়াশোনাটা নিশ্চিত করে যে আপনি একজন আর্কিটেক্ট হিসেবে দক্ষতা অর্জনের জন্য যে যে ব্যাপারগুলো জানা দরকার, তা সম্পর্কে জেনে পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করে এসেছেন।

একাডেমিক পড়াশুনার একটা মূল জায়গা হচ্ছে আর্কিটেকচারের সব শাখা সম্পর্কে একটা বিশদ ধারণা দেয়া হয়। অর্থাৎ একজন আর্কিটেক্ট হিসেবে আপনি হয়তো একটা হাসপাতাল ডিজাইন করেছেন, কিন্তু আপনি কখনো হোটেল ডিজাইন করেন নি। আপনার একাডেমিক পড়াশোনাটা নিশ্চিত করে যে আপনি হোটেল ডিজাইন ও করতে পারবেন।

এত গেল ডিগ্রির কথা। এখন আসা যাক লাইসেন্সিং টা কেন জরুরি। আর্কিটেকচারদের সাথে ল কিংবা আইনের একটা যোগাযোগ আছে। কারণ আপনি যে বিল্ডিং বা স্থাপনাটা ডিজাইন করছেন, সেটা শুধু আপনি নিজের জন্য করছেন না। মানুষের ব্যবহারের জন্য করছেন। লাইসেন্স এক্সামটা মূলত নিশ্চিত করে আপনার আর্কিটেকচার সম্পর্কিত দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনগুলো সম্পর্কে বিশদ ধারণা আছে কিনা। কারণ পাবলিক সেফটি আপনার আপনার উপর নির্ভর করে।

তাহলে একজন আর্কিটেক্টের ডিজাইনিং ক্যারিয়ার টা কেমন হবে? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন আর্কিটেক্ট প্রথমে পাঁচ বছরের একটা ব্যাচেলর ডিগ্রী নেন। এরপর তিনি আসলে ছোট ছোট বিল্ডিং ডিজাইন করতে পারেন কিন্তু বড় কোন স্থাপনা বা কোন কিছু ডিজাইন করতে গেলে তাকে ১০ বছরের একটা এক্সপেরিয়েন্স দেখাতে হয়। এরপর ইন্সটিটিউট অফ আর্কিটেক্টস তাঁকে অন্য স্থাপনা তৈরির অনুমোদন দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *